পাবনার চাটমোহরে মসজিদের দুই মেট্রিক টন চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় নারী শিশুসহ পাঁচজন জনকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযুক্ত ওই বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলাম ফৈলজানা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক।
শুক্রবার (৭ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার ফৈলজানা ইউনিয়নের কদমতলী মিনাজ মোড় এলাকায় মারধরের ঘটনা ঘটে। এতে গুরুতর আহত তিনজনকে চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ ভর্তি করা হয়েছে।
আহতরা হলেন, কদমতলী মিনাজ মোড় গ্রামের জয়নাল আবেদীনের স্ত্রী সালমা খাতুন (৩৫), তার শিশু সন্তান সোহেল (১১) ও আলাউদ্দিন আলীর স্ত্রী আলপনা খাতুন (৩২)।
স্থানীয় বাসিন্দা লোকমান হোসেন বলেন, গত বুধবার (৫ মার্চ) দুপুরে উপজেলা থেকে দু’জন কর্মকর্তা এলাকায় এসে জিজ্ঞেস করে ১৫ দিন আগে মিনাজ মোড় জামে মসজিদে সরকারিভাবে দুই টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, পেয়েছি কিনা। কিন্তু আমরা কেউ কিছু জানি না। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি বিএনপি নেতা সাইফুল, মনিরুল ইসলাম, মসজিদ কমিটির ক্যাশিয়ার আব্দুল মতিন মিলে চাল তুলে বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
ওই কর্মকর্তার সামনে ক্যাশিয়ার মতিন বলেন, তিনি টাকা পাননি, এ বিষয়ে কিছু জানেন না।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) দুপুরে গ্রামের মুসল্লীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে গিয়ে এ নিয়ে অভিযোগ দেন।
এসময় খবর পেয়ে মসজিদ কমিটির ক্যাশিয়ার মতিন ইউএনও অফিসে হাজির হয়ে সবার সামনে বলেন, তারা চাল বরাদ্দ পেয়েছেন এবং তুলে বিক্রি করেছেন। চাল বিক্রির ৭০ হাজার টাকা দিতে স্বীকার করেন ইউএনওর সামনে। পরে টাকা মসজিদের তহবিলে জমা দিবেন বলেও জানান মতিন।
এদিকে ইউএনও অফিসে অভিযোগ দেওয়ার জেরে শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে বিএনপি নেতা সাইফুল, তার সহযোগী মনিরুল, মসজিদের ক্যাশিয়ার মতিন, সাদিকুল, শামীম, জাহাঙ্গীর সহ ১৫-২০ জন অভিযোগকারীদের বাড়িতে হামলা চালান। এসময় তাদের বাধা দিতে গেলে নারী-শিশুসহ অনেককে মারধর ও বাড়ি ভাঙচুর করেন। এতে ৫ জন আহত হন।
আহত সালমা খাতুন বলেন, ‘মিনাজ মোড় জামে মসজিদের দুই টন চাল বরাদ্দ পাওয়া যায় সরকারিভাবে। সেই চাল বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করে সাইফুল ইসলাম ও মতিনরা। আমার স্বামীসহ এলাকার অনেকে এর প্রতিবাদ করেন। সেই ক্ষোভে সকালে এসে তারা আমাদের বাড়িঘরে হামলা চালায়। বাধা দিতে গেলে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধরে আমি আহত হই।’
এদিকে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ মিথ্যা দাবি করেছেন অভিযুক্ত সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মসজিদের টাকা আত্মসাতের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। চাল তুলে বিক্রি করেছিলেন মসজিদের ক্যাশিয়ার। সে তো স্বীকার করেছে যে তার কাছে টাকা আছে। এর আগে টাকার জন্য ক্যাশিয়ারকে ওই পক্ষ মারধর করেছিল। সে কারণেও আজকের মারধরের ঘটনা ঘটতে পারে। এ মারধরের সঙ্গে আমি জড়িত নই।’
এ বিষয়ে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুসা নাসের চৌধুরী বলেন, ‘বৃহস্পতিবার গ্রামবাসী একটি অভিযোগ দিয়েছেন। একইদিন মসজিদ কমিটির ক্যাশিয়ার মসজিদের তহবিলে টাকা দিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু আজকে মারধরের ঘটনাটি দুঃখজনক। ফৌজদারি অপরাধ হওয়ায় আইনগতভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’